বিটকয়েনের সবচেয়ে ধনী হোল্ডার কে? top 5 BITCOIN holder !

বিটকয়েনের শীর্ষ ৫ হোল্ডার

বিটকয়েনের শীর্ষ ৫ হোল্ডার

কারা নিয়ন্ত্রণ করেন এই ডিজিটাল সোনা?

বিটকয়েন ধারণকারী ডিজিটাল ওয়ালেট

ভূমিকা: বিটকয়েন (Bitcoin) বিশ্বের প্রথম ও সবচেয়ে মূল্যবান ক্রিপ্টোকারেন্সি, যার বাজার মূলধন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। কিন্তু এই বিকেন্দ্রীভূত মুদ্রার একটি বড় অংশ মাত্র কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত। আজ আমরা জানবো বিটকয়েনের শীর্ষ ৫ হোল্ডার (Wallet Address) ও তাদের সম্ভাব্য পরিচয় সম্পর্কে—যাদের হোল্ডিং পুরো বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে!

সাতোশি নাকামোতো

১. সাতোশি নাকামোতো

~১.১ মিলিয়ন BTC (বর্তমান মূল্য: ~$৭৫ বিলিয়ন)

পরিচয়: বিটকয়েনের রহস্যময় স্রষ্টা সাতোশি নাকামোতো ২০০৮ সালে বিটকয়েন হোয়াইট পেপার প্রকাশ করেন এবং ২০০৯ সালে প্রথম ব্লক (Genesis Block) মাইন করেন। ধারণা করা হয় তিনি প্রায় ১.১ মিলিয়ন BTC জমা করেছেন যা কখনও ট্রান্সফার করা হয়নি। সাতোশির প্রকৃত পরিচয় আজও অজানা - তিনি একজন ব্যক্তি নাকি একটি গ্রুপ তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

সাতোশির ওয়ালেটে থাকা বিটকয়েনগুলো মূল নেটওয়ার্কের প্রথম দিকে মাইন করা হয়েছিল যখন মাইনিং ডিফিকাল্টি খুব কম ছিল। এই বিপুল পরিমাণ বিটকয়েনকে "সাতোশি'স ট্রেজার" নামে ডাকা হয়।

বাজার প্রভাব:

যদি সাতোশি কখনও তার কোিন বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তা বিটকয়েনের মূল্যে মারাত্মক ধস নামাতে পারে। এই সম্ভাবনা ক্রিপ্টো সম্প্রদায়ের মধ্যে সবসময় একটি উদ্বেগের বিষয়। তবে এত বছর পরেও এই কোিনগুলো নিষ্ক্রিয় থাকায় অনেক বিশ্লেষক মনে করেন সাতোশি হয়তো তার প্রাইভেট কী হারিয়ে ফেলেছেন অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে এই কোিনগুলো কখনও ব্যবহার করবেন না।

মাইকেল সেলর

২. মাইক্রোস্ট্র্যাটেজ

~২২৬,৩৩১ BTC (বর্তমান মূল্য: ~$১৫ বিলিয়ন)

পরিচয়: মাইক্রোস্ট্র্যাটেজ একটি পাবলিক ট্রেডিং কোম্পানি (NASDAQ: MSTR) যার CEO বিটকয়েনের কুখ্যাত প্রবক্তা মাইকেল সেলর। ২০২০ সালের আগস্ট থেকে তারা কোম্পানির ব্যালেন্স শিটে বিটকয়েন জমা করা শুরু করে এবং এটিকে "ডিজিটাল গোল্ড" হিসেবে বিবেচনা করে।

মাইক্রোস্ট্র্যাটেজ তাদের বিটকয়েন ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে যার মধ্যে বন্ড ইস্যু এবং শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ অন্তর্ভুক্ত। মাইকেল সেলর ব্যক্তিগতভাবেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিটকয়েনের মালিক।

বাজার প্রভাব:

মাইক্রোস্ট্র্যাটেজের প্রতিটি ক্রয়-বিক্রয় সরাসরি বাজারকে প্রভাবিত করে। যখন তারা বড় অর্ডার দেয় তখন তা মূল্য বাড়াতে সাহায্য করে। কোম্পানিটি তাদের হোল্ডিং নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে যা ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের জন্য একটি বেঞ্চমার্ক হিসেবে কাজ করে। তাদের বিটকয়েন কৌশল অন্যান্য পাবলিক কোম্পানিকেও বিটকয়েন হোল্ডিং শুরু করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

চাংপেং জাও

৩. বিনান্স

~২৫০,০০০ BTC (বর্তমান মূল্য: ~$১৭ বিলিয়ন)

পরিচয়: বিনান্স বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ যার প্রতিষ্ঠাতা চাংপেং জাও (CZ)। বিনান্সের হোল্ডিংয়ে ব্যবহারকারীদের ডিপোজিট, কোল্ড ওয়ালেট এবং এক্সচেঞ্জের নিজস্ব রিজার্ভ অন্তর্ভুক্ত।

বিনান্স শুধু একটি এক্সচেঞ্জই নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ ক্রিপ্টো ইকোসিস্টেম যার মধ্যে ট্রাস্ট ওয়ালেট, লেন্ডিং প্ল্যাটফর্ম, NFT মার্কেটপ্লেস এবং ব্লকচেইন প্রজেক্ট রয়েছে। বিনান্সের বিটকয়েন হোল্ডিং তাদের সমস্ত প্ল্যাটফর্ম জুড়ে ছড়িয়ে আছে।

বাজার প্রভাব:

হ্যাকিং, রেগুলেটরি চাপ বা ব্যবহারকারীদের টাকা তোলার চাপে বিনান্সের বিক্রি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। ২০২২ সালে FTX পতনের সময় বিনান্সের বিক্রি বাজারে ধস নামায়। বিনান্সের হোল্ডিং ট্র্যাক করা কঠিন কারণ তারা বিভিন্ন ওয়ালেটে তাদের সম্পদ ছড়িয়ে রাখে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার

৪. যুক্তরাষ্ট্র সরকার

~২১৫,০০০ BTC (বর্তমান মূল্য: ~$১৪.৭ বিলিয়ন)

পরিচয়: যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে ব্যবহৃত বিটকয়েন জব্দ করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎস ছিল সিল্ক রোড ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেস থেকে ২০১৩ সালে জব্দ করা ১৪৪,০০০ BTC। ২০২২ সালে FTX পতনের পর আরও কিছু বিটকয়েন জব্দ করা হয়েছে।

এই বিটকয়েনগুলো US মার্শাল সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। সরকার পর্যায়ক্রমে এই বিটকয়েনগুলো নিলামে বিক্রি করে থাকে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তারা বেশ কিছু ব্যাচ বিক্রি করেছে যা বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল।

বাজার প্রভাব:

সরকারি বিক্রি বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমাতে পারে। সরকার সাধারণত বড় অঙ্কের বিক্রি করে থাকে যা স্বল্পমেয়াদে বাজারকে প্রভাবিত করে। তবে সরকারের বিক্রির সময়সূচী আগে থেকে জানানো হয় যা বিনিয়োগকারীদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। সরকারের হোল্ডিং ক্রিপ্টো বাজারে সরকারি হস্তক্ষেপের একটি রূপ হিসেবে দেখা হয়।

গ্রাকেল

৫. গ্রাকেল – GBTC ট্রাস্ট

~২৯০,০০০ BTC (বর্তমান মূল্য: ~$২০ বিলিয়ন)

পরিচয়: গ্রাকেল একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম যার GBTC (Grayscale Bitcoin Trust) ট্রাস্ট ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের জন্য বিটকয়েন এক্সপোজার প্রদান করে। গ্রাকেল ডিজিটাল কারেন্সি গ্রুপ (DCG) এর একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান।

GBTC একটি ক্লোজড-এন্ড ফান্ড হিসেবে শুরু হয়েছিল যেখানে ইনভেস্টররা শেয়ার কিনতে পারত কিন্তু রিডিম করতে পারত না। ২০২৪ সালে এটি একটি স্পট BTC ETF-এ রূপান্তরিত হয়। গ্রাকেলের হোল্ডিং মূলত GBTC এর অধীনস্থ বিটকয়েনগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে।

বাজার প্রভাব:

ETF-এ রূপান্তর বা ফান্ড ফ্লো বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে। GBTC থেকে বড় অঙ্কের উত্তোলন বিটকয়েনের মূল্যকে প্রভাবিত করতে পারে। গ্রাকেলের ফি কাঠামো এবং এর প্রতিযোগীদের সাথে তুলনা বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। গ্রাকেলের হোল্ডিং ইনস্টিটিউশনাল বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

বিতর্ক ও উদ্বেগ

কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ: বিটকয়েনের "বিকেন্দ্রীভূত" আদর্শের বিপরীতে, এই বড় হোল্ডাররা নেটওয়ার্কের ভোটিং পাওয়ার বাড়িয়ে দেয়। প্রায় ২% ওয়ালেট সমস্ত বিটকয়েনের ৭১% নিয়ন্ত্রণ করে যা কেন্দ্রীভূতকরণের উদ্বেগ তৈরি করে।

মার্কেট ম্যানিপুলেশন: কিছু হোল্ডার পাম্প-অ্যান্ড-ডাম্প স্কিমে জড়িত থাকার সন্দেহে তদন্তাধীন। বড় হোল্ডারদের সমন্বিত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে।

উপসংহার

বিটকয়েনের বড় হোল্ডাররা এর মূল্য ও স্থিতিশীলতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদিও সাধারণ ইনভেস্টরদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ, তবুও ব্লকচেইনের স্বচ্ছতা এই শক্তিগুলোকে ট্র্যাক করতে সাহায্য করে। ভবিষ্যতে, ইনস্টিটিউশনাল বিনিয়োগ বাড়লে এই তালিকা পরিবর্তন হতে পারে। বিটকয়েনের প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ছোট হোল্ডারদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বড় হোল্ডারদের প্রভাব কমাতে হবে।

দ্রষ্টব্য: হোল্ডিংয়ের পরিমাণ সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল। কিছু ওয়ালেটের মালিকানা অনুমাননির্ভর। শেষ হালনাগাদ: জুন ২০২৪।

Post a Comment

0 Comments