☕ যে ৮ ধরনের মানুষের জন্য কফি খাওয়া বিপজ্জনক
কফি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খুব পরিচিত এক পানীয়। সকালে ঘুম ভাঙাতে বা অফিসে কাজের মাঝে চাঙা থাকতে এক কাপ কফি যেন সবার পছন্দের সঙ্গী। কিন্তু এই কফি সবার জন্য সমান নিরাপদ নয়। যাদের শরীরে কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটি হতে পারে বড় ধরনের বিপদের কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কফিতে থাকা ক্যাফেইন হার্টরেট বাড়ানো, ঘুম নষ্ট করা, গ্যাস্ট্রিক বা উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতে পারে।
তাই কারা কফি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবে — তা জানা খুব জরুরি। নিচে এমন ৮ ধরনের মানুষের কথা বলা হলো, যাদের জন্য কফি বিপজ্জনক হতে পারে 👇
১. যাদের শরীর ক্যাফেইনের প্রতি সংবেদনশীল
অনেক মানুষের শরীর স্বাভাবিকভাবে ক্যাফেইন সহ্য করতে পারে না। সামান্য কফি খেলেও তাদের শরীরে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। WebMD-এর তথ্য অনুযায়ী, সংবেদনশীল মানুষের মধ্যে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, মাথা ধরা বা উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া সাধারণ বিষয়।
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
- অস্থিরতা বা নার্ভাসনেস
- মাথা ঘোরা বা মাথা ধরা
- হজমে সমস্যা
- ঘুমের ব্যাঘাত
২. গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ক্যাফেইন মা ও শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। Mayo Clinic-এর তথ্য অনুযায়ী দিনে ২০০ মি.গ্রা.-র বেশি ক্যাফেইন খাওয়া গর্ভপাত বা শিশুর ওজন কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে
- শিশুর ওজন কমে যেতে পারে
- হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে
- ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে
৩. হৃদরোগীদের জন্য কফি ক্ষতিকর
কফিতে থাকা ক্যাফেইন রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বাড়ায়, যা হৃদরোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। American Heart Association জানিয়েছে, যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাদের জন্য নিয়মিত কফি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
- রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
- হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
- মাথা ঘোরা
- হার্টে চাপ পড়া
৪. গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির রোগীদের জন্য সমস্যা
কফি পাকস্থলির অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়, যা গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটি সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। Healthline বলছে, খালি পেটে কফি খাওয়া গ্যাস্ট্রিক আরও বাড়িয়ে তোলে।
- হার্টবার্ন বা জ্বালাপোড়া
- পেট ব্যথা
- হজমে সমস্যা
- গ্যাসের সমস্যা
৫. শিশু ও কিশোরদের জন্য কফি ক্ষতিকর
শিশু ও কিশোরদের দেহে ক্যাফেইনের প্রভাব অনেক বেশি। তাই কম বয়সে কফি খাওয়া তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। CDC শিশুদের জন্য ক্যাফেইন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
- ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে
- মাথাব্যথা হয়
- মনোযোগ কমে যায়
- অস্থিরতা বাড়ে
৬. উদ্বেগ বা মানসিক চাপ থাকা ব্যক্তিরা
কফিতে থাকা ক্যাফেইন স্নায়ুকে উত্তেজিত করে। ফলে যাদের আগে থেকেই মানসিক চাপ বা উদ্বেগ আছে, তাদের মধ্যে এই সমস্যা আরও বাড়ে। NHS জানিয়েছে, এ ধরনের মানুষদের হারবাল টি খাওয়া উত্তম।
- নার্ভাসনেস
- প্যানিক অ্যাটাক
- ঘুমের ব্যাঘাত
- অস্থিরতা
৭. ঘুমের সমস্যা আছে যাদের
ক্যাফেইন ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন কমিয়ে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। Sleep Foundation জানায়, বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে কফি খাওয়া ঘুমের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
- অনিদ্রা
- রাতে ঘুম না আসা
- মাথা ধরা
- ক্লান্তি অনুভব
৮. অস্টিওপোরোসিস বা হাড় দুর্বলতার রোগী
অতিরিক্ত কফি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ কমিয়ে হাড় দুর্বল করে দেয়। NCBI গবেষণা অনুযায়ী, এটি হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
- ব্যথা অনুভব করা
- ক্যালসিয়ামের ঘাটতি
- ভাঙনের ঝুঁকি
সাধারণ কিছু প্রশ্ন
প্রশ্ন ১: কফি খেলে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে?
✓গর্ভবতী নারী, হৃদরোগী, গ্যাস্ট্রিক রোগী, মানসিক উদ্বেগ বা ঘুমের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা।
প্রশ্ন ২: দিনে কতটুকু কফি খাওয়া নিরাপদ?
✓ সাধারণত দিনে ২–৩ কাপের বেশি নয়।
প্রশ্ন ৩: খালি পেটে কফি খাওয়া কি ঠিক?
✓ না। এতে গ্যাস্ট্রিক বেড়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন ৪: কফির বিকল্প কী হতে পারে?
✓গ্রিন টি, হারবাল টি বা ক্যাফেইন-মুক্ত ড্রিংকস।
শেষ কথা
কফি আমাদের মন সতেজ করে ঠিকই, কিন্তু সবার জন্য এটি সমানভাবে উপকারী নয়। যাদের শরীর ক্যাফেইনের প্রতি সংবেদনশীল বা যাদের নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তাদের জন্য কফি খাওয়া বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই নিজের শরীর ও স্বাস্থ্যের অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে কফি খাওয়াই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।