দিনের বেলার ঘুম বা ভাতঘুম আমাদের শরীর ও মনের জন্য এক ধরণের রিফ্রেশ বাটন হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে দুপুরের খাবারের পর সামান্য ঘুম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে, মনকে সতেজ রাখে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট্ট ভাতঘুম স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, শেখার ক্ষমতা উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, সঠিক সময়ের বেশি ঘুম নিলে নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
দিনের বেলার ঘুমের সুবিধা
পরিমিত ভাতঘুম শরীর ও মনের জন্য অনেক উপকারে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুপুরের খাবারের পর ১০–২০ মিনিট ঘুম নেওয়া হলে:
- মনোযোগ ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ে।
- স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- মানসিক চাপ ও ক্লান্তি কমে।
- মেজাজ ভালো থাকে।
- শরীরের শক্তি ও ফোকাস ফিরে আসে।
- দৈনন্দিন কাজের মান উন্নত হয়।
- হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে।
- সৃজনশীল চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ে।
কখন ক্ষতির কারণ হয়?
অতিরিক্ত বা দীর্ঘ সময়ের ভাতঘুম শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এক ঘণ্টার বেশি ঘুমের ফলে:
- ঘুম ভাঙার পর জড়তা ও তন্দ্রাচ্ছন্নতা তৈরি হয়।
- শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম ব্যাহত হয়।
- রাতের ঘুমের মান খারাপ হয়।
- হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
- ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত ওজনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- মেডিটেশন বা মানসিক প্রশান্তি কমে।
- দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি এবং দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পায়।
- সৃজনশীল চিন্তা ও মনোযোগ হ্রাস পেতে পারে।
করণীয় কী?
দিনের বেলার ঘুম সবসময় খারাপ নয়। বরং সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে নিলে এটি শরীর ও মনের জন্য খুবই উপকারী। তাই:
- দুপুরের খাবারের পর ১০–২০ মিনিট ভাতঘুম করুন।
- এক ঘণ্টার বেশি ঘুম এড়িয়ে চলুন।
- শরীরের সংকেত শুনুন, অপ্রয়োজনীয় ঘুম এড়িয়ে চলুন।
- পর্যাপ্ত রাতের ঘুম নিশ্চিত করুন যাতে দিনে অতিরিক্ত ঘুমের প্রয়োজন না হয়।
- ভাতঘুমের আগে হালকা হাঁটাহাঁটি বা চাপমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
- সোশ্যাল মিডিয়া বা ফোন ব্যবহার না করে বিশ্রাম নিন।
- সুস্থ খাবার ও হালকা ব্যায়ামও দিনের ঘুমের মান বাড়ায়।
- প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
চিকিৎসকরা বলছেন, “দুপুরের ঘুম সংক্ষিপ্ত ও নিয়ন্ত্রিত হলে এটি শরীর ও মনের জন্য ওষুধের মতো কাজ করে। তবে দীর্ঘ ও অতিরিক্ত ঘুম শরীরকে অলস করে তোলে। ভাতঘুমকে সীমিত রাখলে মানসিক চাপ কমে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।”
সারসংক্ষেপ
দিনের বেলার ঘুম পরিমিত হলে শরীর ও মনের জন্য উপকারী। এটি মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত দীর্ঘ ঘুম শরীরের ঘড়ি ও হরমোন ভারসাম্যকে ব্যাহত করে, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই দিনে ঘুমের সময় সীমিত রাখুন, রাতের ঘুম নিশ্চিত করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। এইভাবে ভাতঘুম স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে পরিণত হবে এবং আপনার দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।



0 Comments