আকাশের নীরবতা: যেখানে পাখিরা এখন কেবলই স্মৃতি ! | Tangled in Tech: The Silence of a Bird's Wings

একসময় আমাদের মাথার ওপরের আকাশটা ছিল এক বিশাল ক্যানভাস, যেখানে পাখিরা আঁকত জীবনের ছবি। তাদের স্বাধীন ওড়াউড়ি, ডানার ঝাপটানি আর কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হতো প্রতিটি সকাল। শালিকের দল, বকের সারি, আর চিলের তীক্ষ্ণ ডাক—সবকিছু মিলে এক জীবন্ত সিম্ফনি তৈরি করত, যা আমাদের মনকে শান্তি দিত। বিশেষ করে শহরের বাইরে, গ্রামের দিকে, এই দৃশ্য ছিল প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ডিজিটাল জগতের অদৃশ্য জাল

কিন্তু আজ সেই আকাশ কেমন যেন ফাঁকা। পাখিদের সেই অবাধ বিচরণ প্রায় নেই বললেই চলে। এখন আকাশ দিয়ে ওড়ে আমাদের প্রযুক্তির স্বপ্ন—অদৃশ্য ডেটা তরঙ্গ, মোবাইল নেটওয়ার্ক আর হাজারো স্যাটেলাইটের সিগন্যাল। আমরা আমাদের আঙুলের ডগায় পুরো পৃথিবীকে এনেছি, কিন্তু অজান্তেই কেড়ে নিয়েছি পাখিদের পৃথিবী।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মোবাইল টাওয়ার এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নির্গত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন পাখিদের জীবনচক্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এই তরঙ্গগুলো পাখিদের দিক নির্ণয়ের ক্ষমতাকে বিভ্রান্ত করে, যার ফলে তারা পথ হারিয়ে ফেলছে। তাদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, ডিমের খোসা পাতলা হয়ে যাচ্ছে, এবং তাদের বেঁচে থাকার হার হ্রাস পাচ্ছে। একসময় যে প্রকৃতি ছিল তাদের নিরাপদ আশ্রয়, আজ তা মানুষের তৈরি অদৃশ্য প্রযুক্তির জালের কারণে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

উন্নতির মূল্য

আমাদের জীবন দ্রুত উন্নত হচ্ছে। ফোর-জি, ফাইভ-জি-এর মতো উচ্চগতির ইন্টারনেট আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করেছে। কিন্তু এই উন্নতির মূল্য কি শুধু টাকা দিয়ে মাপা যায়? প্রকৃতির এই নীরবতা, পাখিদের এই অনুপস্থিতি কি আমাদের সভ্যতার জন্য এক বড় ক্ষতি নয়? হয়তো আমরা এখন বুঝতে পারছি না, কিন্তু যখন আকাশ থেকে শেষ পাখিটিও তার ডানা গুটিয়ে নেবে, তখন আমরা উপলব্ধি করব যে আমরা কী হারিয়েছি।

আমরা প্রযুক্তির বিরুদ্ধে নই, কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। যদি আমরা এখন থেকেই সচেতন না হই, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেবল গল্পের বইয়েই পাখির গল্প দেখবে, বাস্তবে তাদের দেখতে পাবে না। আসুন, আমরা সেই নীরবতাকে ভাঙার চেষ্টা করি এবং প্রকৃতির সঙ্গে প্রযুক্তির একটি সুস্থ সম্পর্ক স্থাপন করি।

  
           

©Author: TENDING GB

           

Release date: 10 Sep 2025

Post a Comment

0 Comments