একটা সময় ছিল, যখন বিপদের গন্ধ পেলেই মানুষ ছুটে আসত। সাহায্য করার জন্য নয়, বরং বিপদের অংশীদার হওয়ার জন্য। তখন একজন মানুষ আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারত তার মনের কথা। বিপদে পড়লে, শত না-চেনাও মানুষ এগিয়ে আসত, নিজের জীবন বাজি রেখেও আরেকজনের জীবন বাঁচাতে চাইত। সেই মানবিকতার গল্পগুলো আজ রূপকথার মতো শোনায়।
কেন এই পরিবর্তন?
আজকের যুগে মানুষের চোখে সহানুভূতি নেই, আছে শুধু ক্যামেরা। বিপন্ন মানুষের আর্তনাদ আজ আর সাহায্য করার কারণ নয়, বরং ‘ভাইরাল’ হওয়ার সুযোগ। যখন একজন মানুষ রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছে, তখন তার পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করার বদলে অসংখ্য মুঠোফোন ক্যামেরা অন হয়ে যায়। চারপাশে মানুষের ভিড় জমে, কিন্তু সাহায্যের জন্য নয়, শুধু একটা ভালো ভিডিও শ্যুট করার জন্য। সেই ভিডিওতে হাসি, ঠাট্টা, মশকরা এবং তামাশার বন্যা বয়ে যায়। একজন মানুষের কষ্ট নিয়ে মানুষ হাসে, কারণ এটি তাদের জন্য একটি বিনোদন।
আমরা যেন ক্রমশ বিবেকহীন হয়ে পড়ছি। অন্যকে বিপদে দেখেও আমাদের হৃদয়ে কোনো ব্যথা জাগে না। আমাদের কাছে মানবিকতা, সহমর্মিতা—এসব অর্থহীন শব্দ। আমরা এক অদ্ভুত সমাজে বাস করি, যেখানে অন্যের দুঃখ থেকে আনন্দ খুঁজে নেওয়া হচ্ছে।
এই বিভীষিকার শেষ কোথায়?
এই পরিবর্তন মানব সমাজের জন্য এক ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনছে। যখন আমাদের নিজেদের কোনো বিপদ হবে, তখন আমরা কী আশা করব? কেউ কি এগিয়ে আসবে, নাকি সেই সময়ও আমাদের অসহায়ত্বের ভিডিও করা হবে? এই প্রশ্নগুলো আমাদের নিজেদেরকে করতে হবে।
সহানুভূতি একটি সহজাত গুণ, যা মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে। কিন্তু যখন আমরা আমাদের এই গুণটি হারাতে থাকি, তখন আমরা কীসে পরিণত হই? আমাদের নিজেদের কাছেই এর উত্তর নেই।
আসুন, একবারের জন্য হলেও নিজেদের প্রশ্ন করি: আমরা কি সত্যিই এমন একটা ভবিষ্যৎ চাই যেখানে মানুষের বিপদে সাহায্য করার বদলে হাসাহাসি করা হয়? যদি উত্তর না হয়, তাহলে আজ থেকে শপথ করি, কোনো বিপদে পড়া মানুষকে দেখে আমরা প্রথমে সাহায্যের হাত বাড়াব, তারপর অন্য কিছু ভাবব। কারণ, মানবতা কোনো ভিডিওর বিষয় নয়, এটি জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
0 Comments